শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন
মোঃ আরিফ বিল্লাহ নাছিম,কলাপাড়া (কুয়াকাটা) প্রতিনিধি: রূপ ঐশ্বর্যের বেলাভূমি কুয়াকাটা হারাতে চলছে তার নিজস্ব জৌলুস। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানির চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে সাগরে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোঁয়ারে সাগরে সৃষ্টি হয় প্রকান্ড ঢেউ। শোঁ শোঁ শব্দে ভয়ানক ঢেউগুলো মুখ থুবড়ে আছড়ে পড়ে সৈকতে। বালু ক্ষয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে সাগর পাড়। বিলীন হয়ে যাচ্ছে চির সবুজ ঝাউ বন। আর নারিকেল গাছের মুড়োগুলো জানান দিচ্ছে এক সময়ের নারিকেল বাগানের ঐতিহ্য।
সরেজমিনে সৈকত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে যে, এক একটা বিশাল ঢেউ এসে সজোরে আঘাত হানে সমুদ্র পাড়ে। এতে পাড়ের বিশাল অংশ ফাটল ধরে বিলীন হয়ে যায় সাগরে। মাত্র বছরখানেক ব্যবধানে তাল গাছ, রেইনট্রি গাছ ও নারিকেল গাছসহ নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ঢলে পড়ে সৈকতে। গত বছরে প্রায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ফুট পাড় ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে সাগর গর্ভে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক বনাঞ্চল লেম্বুর চর, ঝাউবন, শালবন, নারিকেল বাগান পড়েছে ধ্বংসের মুখে। এভাবে বালু ক্ষয় অব্যাহত থাকলে অতি কম সময়ের ব্যবধানে কুয়াকাটা বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে আবাসিক এলাকা ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়বে। ফলে একদিকে যেমন হারাবে পৃথিবীর এক জায়গায় দাড়িয়ে সূর্য্যাস্ত ও সূর্য্যদেয় উপভোগ করার স্থান অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়বে ১২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি বিনষ্টসহ জানমাল।
এ বিষয়ে আলাপকালে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, ‘ভারতীয় একটি বিশেষজ্ঞ টিম সৈকতের বালুক্ষয় রোধে কাজ করবে বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, জিইও টিউব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বালুক্ষয় রোধ করা যেতে পারে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। এ ব্যাপারে কুয়াকাটা পেীরসভার মেয়র আঃ বারেক মোল্লা জানান, ওয়াল্ড ব্যাংকের সহায়তায় শ্রিঘ্রই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত রক্ষাতে কাজ শুরু করবে।
দেশের বাহিরে পর্যটন শিল্পের সাফল্য অনুকরণীয় উদাহরণ হতে পারে। মানব সৃষ্ট নিদর্শন হিসেবে মালয়েশিয়ার কৃত্রিম সৈকত ‘লাংকাভি’ অন্যতম মনোরম স্পট। এ স্পটে সরকার কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ প্রচুর রাজস্ব আয়ের পথ তৈরি করেছে। থাইল্যান্ডের মাত্র ৩ কিলোমিটার ‘পাতায়া বীচ’ বিশ্ব পর্যটকদের মনে নেশা ধরিয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ থাইল্যান্ডের কোল্যান্ড আইল্যান্ড, কোচামাই ও সাগরের মাঝে ‘পুকেট’ আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো হয়। ফলে সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ পর্যটকদের কাছে অত্যাধুনিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এটা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। থাইল্যান্ড সরকার পর্যটন খাত থেকে দেশের মোট আয়ের ৮০ শতাংশ রাজস্ব আয় করে থাকে। কিন্ত প্রকৃতির অপার দান ১৮ কিলোমিটারের সমুদ্র সৈকত পেয়েও দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ রয়েছেন উদাসীন।
প্রকৃতি প্রদত্ত প্রচুর সম্ভাবনা থাকতেও কুয়াকাটা কেনো অবহেলায় পড়ে আছে তা রীতিমতো হতাশ করে কুয়াকাটা উন্নয়ন প্রেমিক ও পর্যটকদের। দ্রুত বালুক্ষয় রোধসহ কুয়াকাটার উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসবেন কর্তা ব্যক্তিরা এমনটাই আশা প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীসহ কুয়াকাটার সচেতন মহল।
Leave a Reply